Wednesday, March 28, 2018

আপনার ক্যান্সার হয়েছে কি না, তা নিচের লক্ষণ থেকে জানুন !!

আপনার ক্যান্সার হয়েছে কি না,
তা নিচের লক্ষণ থেকে জানুন !!
আপনার শরীরে কোন রোগ দেখা দিলে শরীর আপনাকে আগাম সংবাদ দিবে । রোগের কিছু লক্ষণ দেখে আপনিই অনুমান করতে পারবেন, আপনার কি হতে পারে । নিচের লক্ষণ গুলোই আপনাকে বলে দিবে, আপনার ক্যানসার হয়েছে । শরীরে বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার হতে পারে: ব্রেইন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, বোন ক্যান্সার, স্ক্রীণ ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি । তবে ক্যান্সার যেখানেই হোক না কেন, কিছু কমন লক্ষণে আপনিই ধারণা করতে পারবেন, আপনার  ক্যান্সার হয়েছে কি না ।

 ঢাকার ক্যান্সার হাসপাতলের ডাক্তাররা ৭টি লক্ষণের কথা বলেছেন:

১. হঠাৎ আপনার শরীরের ওজন কমতে শুরু করবে । কেন কমছে তা বুঝা যাবে না ।

২. হজম বা মল-মূত্র ত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তণ দেখা দিবে । হঠাৎ পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা দিতে পারে । 

৩. সারাক্ষণ জ্বর বা খুসখুসে কাশি থাকছে, কিন্তু ভালো হচ্ছে না ।

৪. শরীরের কোথাও কোথাও চামড়ার নিচে ফোলা ফোলা মাংশ পিন্ড দেখা যাবে । অনেকটা সাধারণ টিউমারের মতো ।

৫. গলার কন্ঠস্বর ভেঙ্গে গেছে, কিন্তু সাধারণ চিকিৎসায় ভালো হচ্ছে না ।

৬. তিল বা আচিলের হঠাৎ পরিবর্তণ দেখা দিবে । যা আকৃতির ছোট বা বড় হবে বা ফোলে যেতে পারে ।

৭. শরীরের যে কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক রক্ত ক্ষরণ হতে পারে । 

উপরের লক্ষণ গুলোর মধ্যে যদি কারো একটি দেখা দেয়, তাহলে তার চিকিৎসায় যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে না সেরে যায়, তবে ক্যান্সার বিষয়টি মাথায় নিয়ে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হবেন । আশাকরি, শুরুতেই ভালো হবেন । কোন একটি লক্ষণ শুরুতেই দেখা দিলে, আপনি মনে করবেন না যে, আপনার ক্যান্সার হয়েছে । দুই সপ্তাহের চিকিৎসার পর ধারণা করবেন । সাবধানে থাকতে তো আর দোষের কিছু নেই ।

সূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল

Saturday, March 24, 2018

একটি ভাগ্য বদলের গল্প ও সৌদির আজুয়া খেজুর বাগান বাংলাদেশে

একটি ভাগ্য বদলের গল্প: 
সৌদির আজুয়া খেজুর বাগান বাংলাদেশে 

পরিশ্রম ও ইচ্ছা থাকলে মানুষ যে তার ভাগ্য বদলাতে পারে, তা চিরকাল সত্য বলে প্রমানীত হয়েছে । আজো প্রমানীত হয়েছে, ময়মনসিংহ জেলার, ভালুকার, নামাপাড়া গাঁয়ের মোতালেব এর বেলায় । মোতালেব ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমান সৌদি আরবে । স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা সবার ভালোবাসা ছেড়ে সৌদি আরবের মরুভূমির প্রচন্ড গরমে কাজ করতে থাকেন এক খেজুর বাগানে । মরুভূমির প্রচন্ড গরমে মোতালেব মাঝে মধ্যে খুবই কষ্ট পেতেন । তবুও দেশের ভালোবাসা আর ভাগ্যবদলের স্বপ্ন তাকে সেখানে থাকতে বাধ্য করেন । খেজুর বাগানে কাজ করতে থাকেন টানা তিন বছর । কাজ করতে করতে এক সময় খেজুর বাগান পরিচর্যার সমস্ত নিয়ম কানুন শিখে ফেলেন । দীর্ঘ দিন কাজ করার ফলে বাগান মালিকের সাথে মোতালেবের একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেন । সে স্বপ্ন দেখতে থাকেন, কিভাবে দেশের মাটিতে একটি সৌদি খেজুরের বাগান করা যায় । একদিন বাগান মালিককে বলেন, তিনি তার কাছ থেকে কিছু খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে যেতে চান । বাগান মালিকও সুযোগ পেয়ে একটি কঠিন শর্ত জুড়ে দেন । মোতালেব চিন্তায় পড়ে যান এবং বিষয়টি নিয়ে অনেক ভাবতে থাকেন । শেষ পর্যন্ত বাগান মালিককে ছয় মাসের বেতন বাবদ, তিন হাজার ছয়শত রিয়েলের বিনিময়ে কিছু আজুয়া খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে, ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেন । 

                       বীজ গুলো লাগানোর জন্য, একটি জায়গা নির্ধারন করে বীজ গুলো রোপন করেন । এক মাস যাবার পর বীজ থেকে চারা গজাতে শুরু করেন । মোতালেবের আনন্দে মন ভরে যায় । ছল ছল চোখে গাছের চারা গুলো দেখতে থাকেন । সে ভাবতে থাকেন তার স্বপ্ন হয়তো সত্যি হতে চলছে । মোতালেব সিদ্ধান্ত নেন, সে আর সৌদি ফিরে যাবেন না । সে চারা গাছ গুলোর পরিচর্যা করতে থাকেন । গাছ গুলো দিন দিন বড় হতে থাকে । জীবন ও স্বপ্নের কাছে যেন সব কিছুই বাজী ধরেছেন মোতালেব । কিছুই চায় না সে । শুধুই তার স্বপ্ন, এদেশের মাটিতে একটি সৌদি খেজুরের বাগান । প্রতিবেশীদের বিভিন্ন ধরনের নিরুৎসাহেও তার মন ভাঙ্গেনি, তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন । গাছ বড় হয়ে ফুল ধরতে শুরু করেন । 

                          মোতালেব অত্যান্ত আনন্দের সাথে কাজ করতে থাকেন । প্রতিবেশী শত্রুরা তার গাছের ফুল গুলো রাতের অাঁধারে কেটে, সেচ পাম্পটিও চুরি করে নিয়ে যায় । সেই সাথে অনেক গুলো গাছও কেটে ফেলা হয় । তবুও তার মন ভাঙ্গে না, তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন । মোতালেব খেজুর বাগান বাঁচাতে পাহারা দেবার জন্য বাগানের ভিতর, এটি উঁচু কুঁড়ে ঘর নির্মান করে পাহারা দেওয়া অব্যাহত রাখেন । প্রতিবেশী শত্রুরা বারবার বাগান ধ্বংশের চেষ্টা করেও ব্যার্থ  হন ।  এতো বাঁধা সত্ত্বেও সে হাল ছাড়েননি, বরং তার স্বপ্নের দানা আরো বাড়তে থাকে । ২০০৬ সালে বাগানের খেজুর গাছ গুলোতে রিষ্ট-পুষ্ট বড় বড় খেজুর ধরতে শুরু করে । মোতালেবের মুখে আনন্দের হাসি । শত্রুরা তার কাছে পরাজিত হয় । একের পর এক,  খেজুর গাছে ফল ধরতে শুরু করে । এই খেজুর জাতের নাম “আজুয়া” । আমাদের মহানবী এই জাতের খেজুরের বাগান লাগিয়ে ছিলেন । মোতালেব তার আস্থায় অবিচল ছিলেন বলেই তার সফলতা আসেন । ২০০১ সালে এই বাগানের যাত্রা শুরু করে এবং ২০০৬ সালে ফল ধরতে শুরু করে । ২০১২ সালে এসে মোতালেব একজন সফল “সৌদি খেজুর চাষি” । ২০১৮ সালে এসে, সে তার ভাগ্য পুরোপুরি বদলিয়েছে । বদলিয়েছে তার আর্থিক অবস্থা । 

                            মোতালেবের বাগানের প্রতিটি সাধারণ চারার মূল্য ২০০ টাকা । কিছু চারা রয়েছে যা সরাসরি গাছ থেকে শাখা বের হয়ে তৈরী হয় । এধরনের একেকটি চারার মূল্য এক লক্ষ থেকে চার/পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে । খেজুরের চারার গুনগত মানের উপরই চারার দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে । কাঁচা আজুয়া খেজুর, বাগান থেকেই তিন হাজার টাকা দরে মানুষ কিনে নিয়ে যান । মোতালেবের আজুয়া খেজুর চাষ বাংলাদেশের জন্য এক বিষ্ময় । তার খেজুরের বাগান ছিল অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো । প্রবাদ আছে, “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” । সেটাই আজ প্রমানিত হলো । মোতালেবের হাত ধরেই ছড়িয়ে পড়ুক “সৌদি খেজুরের বাগান” বাংলাদেশের প্রতিটি বাড়িতে । এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।

Saturday, March 17, 2018

কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন ভ্রমন

কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন ভ্রমন

আমরা রেডি হয়ে বসে আছি । বাস কখন আসবে তার অপেক্ষায় সবাই । ছয়টা প্রায় বাজতে চলছে । চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে কক্সবাজারে হোটেল জামানের রিসিপসনে আমরা বসে আছি । আগের দিনই আমরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্যাকেজ বুকিং দিয়ে এসেছি । এখুনি টুরিস্ট বাস আমাদের নিতে আসবে । সবার মাঝেই এটা ঘুম ঘুম ভাব রয়েছে, তবুও আনন্দ যেন সবার ঘুমকে ম্লান করে দিয়েছিল । আমাদের পরিবারে ছিলাম তিন জন । আমি, আমার ছেলে তূর্য ও স্ত্রী অন্তরা । ইতিপূর্বে কোন দিন আমি সেন্টমার্টিন যাইনি । তাই নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াবো, বিষয়টা স্বপ্নের মতো লাগছিল । কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটা ট্রাভেল বাসের হর্ণ বাজার শব্দ শুনতে পেলাম । কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস সুপারভাইজার জামান হোটেলের রিসিপসনে এসে আমাদের নেয়ার জন্য খোঁজ করলো । আমরা তার সাথে এসে বাসে বসলাম । সবার চোখেই ঘুমছিল, তবুও মনে যে সবার আনন্দের হাসি ছিল তা স্পষ্টই বুঝতে পারছিলাম । বাসটি আমাদের নিয়ে ছেড়েদিল ।                

আমরা অাঁকাবাকা রোড দিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম । দুই পাশে বন আর পাহাড় । আমরা বসে ছিলাম বাসের সবার সামনের সীটে ড্রাইভারের বাম পাশে । তাই সহজেই সব কিছুই ভিডিও করতে এবং ছবি তুলতে পারছিলাম । আমি কখনো কখনো ভিডিও এবং ছবি তুলছিলাম আর প্রকৃতির এই সৌন্দর্য মনোমোগ্ধ হয়ে দেখছিলাম । কিছুদুর যাওয়ার পর দেখলাম, মাইলের পর মাইল বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রেখেছে । প্রতিটি জমির পাশে পলিথিন পেপার বিছিয়ে কি যেন শুকাচ্ছে । ড্রাইভার আমাকে বলল, “এগুলো লবনের ক্ষেত । এখান থেকে সারা দেশে লবন পাঠানো হয়”। আমাদের বাসটি অাঁকাবাকা পথ ধরে দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে সামনে এগিয়ে চললো । পথে কয়েকটি বর্ডার গার্ডের চেকপোস্টের চৌকি পেরিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম টেকনাফে ।

তখন সকাল নয়টা । আমরা বাস থেকে টেকনাফ নেমে নাস্তা করলাম । কিছুক্ষনের মধ্যেই টিকিট নিয়ে আমাদের গাইড উপস্থিত হলো । আমরা গাইডের সাথে সাথে লঞ্চ এর দিকে এগুলাম ।একশত গজ যাবার পর লক্ষ্য করলাম একটা লম্বা কাঠের ব্রিজ । এই ব্রিজ গিয়ে মিশেছে নাফ নদীতে ভিড়িয়ে রাখা লঞ্চ পর্যন্ত । ওখানে একটি বড় লঞ্চ দেখতে পেলাম। শুনেছি এই লঞ্চটি আজই বরিশাল থেকে আনা হয়েছে । আমরাই নাকি এই প্রখম যাত্রি । শুনে খুবই ভালো লাগলো । আমরা যথারীতি লম্বা কাঠের ব্রিজ পেরিয়ে লঞ্চে উঠে এলাম । যাত্রি কম থাকায় আমরা সুবিধা জনক সুন্দর একটি যায়গা দেখে চেয়ারে বসে পড়লাম । আমি লঞ্চের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গাঙচিল উড়ার দৃশ্য দেখে ছবি তুললাম এবং ভিডিও করলাম । লঞ্চ চলতে থাকলো । বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা নাফ নদীর ওপারের বার্মার গ্রামগুলো ও জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে থাকলাম । মাঝে মধ্যে নদীর পানির বড় বড় ঢেউ আর গাঙচিল উড়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা সেন্টমার্টিন পৌঁছে গেলাম । 

আমরা লঞ্চ থেকে নামার পর সেখানকার লোকাল গাইড আমাদের সাথে দেখা করলো । আমরা সবাই লঞ্চ থেকে নেমে গাইডের সাথে সাথে হাঁটতে থাকলাম । আমাদের প্রথমে নেয়া হলো সেন্টমার্টিনের ছোট একটি বাজারে । সেখানে আমাদের জন্য নির্ধারিত একটি রেষ্টুরেন্টে দুপুরে লাঞ্চ করলাম । তারপর মাত্র দুই ঘন্টা সময় পেলাম । আমরা ভ্যান গাড়ির মতো তৈরি করা একটি রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বাড়িতে । 

সামনেই সীবিচ এর বড় অংশ যেখানে বড় বড় পাথরের মতো প্রবাল রয়েছে । আমরা এসে প্রবালের উপর দাঁড়ালাম । চার দিকে বাতাস বইছে । ছোট ছোট ঢেউগুলো ঝাপটা মেরে আমার পা দুটি ভিজিয়ে দিচ্ছে । মাঝে মাঝে বড় ঢেউ এসে সমুদ্র পাড়ে আছড়ে পড়ছে । আমরা সমুদ্র পাড়ে রাখা চেয়ারে বসে ডাব খেলাম ও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম । কিছুক্ষণ পর পুনরায় প্রবালের উপর এসে দাঁড়ালাম । প্রবালের পাশ দিয়ে ছোট ছোট মাছ ও কাঁকড়ার ঘুরাঘুরি দেখতে পেলাম । সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাসের শো শো শব্দ আর ঢেউয়ের গর্জন শুনতে শুনতে আমাদের সময় শেষ হয়ে এলো । 


                                          আমি একটি ছোট্ট শিশুকে বসে থাকতে দেখলাম । আমি ওর কাছে গেলাম । ওর কাছে কিছু ঝিনুক ও কয়েকটি প্রবাল দেখতে পেলাম । আমি ওগুলো সংগ্রহ করে লঞ্চে ফিরে এলাম । প্রকৃতি যে এতো সুন্দর হতে পারে, তা যদি স্ব-চক্ষে কেউ না দেখে তাহলে  অনুমান করতে পারবে না । আমাদের লঞ্চ টেকনাফের  উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করলো । আমি লঞ্চে বসে ভাবতে লাগলাম । সেন্টমার্টিন এর প্রকৃতি এতো সুন্দর হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না । সেন্টমার্টিন এর সুন্দর প্রকৃতি, বাতাস আর ঢেউয়ের কথা মনে করতে করতে কখন যে টেকনাফ এসে পৌঁছে গেলাম, বুঝতেই পালাম না ।         

     

Saturday, March 10, 2018

সম্ভাবনাময় একটি বিদেশী ড্রাগন ফল: এই ফল চাষ করা খুবই সহজ

সম্ভাবনাময় একটি বিদেশী ড্রাগন ফল: 
এই ফল চাষ করা খুবই সহজ

ড্রাগন একটি সুস্বাদু ও সুমিষ্ট জনপ্রিয় ফল । এটি ক্যাকটাস গ্রুপের অর্ন্তভূক্ত । এই রসালো ফলটি খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে । বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই বিদেশী ফলের বাগান করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে । কোন কোন ফল চাষে সফলতা এসেছে । আবার কোন কোন ফল চাষে সফলতা আনতে পারেনি । আমাদের দেশের আবহাওয়া, মাটি ও আদ্রতা সব মিলিয়ে ড্রাগন ফল চাষে সফলতা এসেছে । এই ফল গাছটি আমাদের দেশের অন্যান্য ফল গাছের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে । থাইল্যান্ড, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ এশিয়ার অনেক দেশেই এই ফলের চাষ অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে । উত্তর বঙ্গের কিছু জেলা, ময়মনসিংহ ও পার্বত্য অঞ্চলের কিছু অংশে এই ফলের বানিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই এই ড্রাগন ফলটি সারা দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে পারে ।

                                                          ড্রাগন ফলটি ভিয়েতনামের জাতীয় ফল । এই ফল গাছটি ক্যাকটাস গ্রুপের অর্ন্তভূক্ত রসালো ফল দায়ক গাছ । ক্যাকটাস গ্রুপের এই গাছটিতেই শুধু ফল ধরে । ক্যাকটাসের অনেক জাত আছে, তার মধ্যে কয়েকটি জাতের গাছ আমাদের বাড়িতে শোভা বর্ধণ করে । ক্যাকটাস গ্রুপের আরো কিছু গাছ রয়েছে, যাদের সব্জি হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে খেয়ে থাকেন । ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে গবেষণার জন্য ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে কিছু চারা সংগ্রহ করে এবং তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন । 

                                                         এই ফলে অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে । যা হার্ট ও ডায়াবেটিক রোগে কার্যকর । এই ফল গাছ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সহ সারা দেশে ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে । এই গাছ বাড়ির আশে-পাশে খুবই অল্প পরিমান পতিত জায়গায় চাষ করা সম্ভব । আমাদের দেশের যেখানে কোন ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব নয়, সেখানেই এই ফলের চাষ সম্ভব । এই গাছের চারা বছরের যে কোন সময়ে লাগানো সম্ভব । এই গাছের ডাল থেকে ছোট ছোট শাখা বের হয়ে চারায় পরিণত হয় । এই চারার গুড়ি একটু শক্ত হলেই মাটিতে লাগাতে হয় । একটি চারা বড় হয়ে ফল ধরতে মাত্র ছয় মাস সময় লাগে । গাছের মূল কান্ডের পাশ দিয়ে ছোট ছোট ফুল হয়ে ফল ধরতে শুরু করে । শীতের সময়ে এই গাছে ফল ধরেনা । এই সময়ে গাছের উপরে ১০০ ওয়াটের ২টি লাইট প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে জ্বালিয়ে রাখলে গাছে ফল আসে । আমাদের দেশে একটি গাছে কমপক্ষে ৫০০টির বেশী ফল ধরে । প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে । ভিয়েতনামে প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১০০০ থেকে ১১০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে । 

                                                         এই গাছ থেকে চারা উৎপাদন খুবই সহজ । অল্প পানি সহ গোবর সারের মধ্যে, যদি সংগ্রহ করা ডালের গুড়ি কয়েক দিন পোতে রাখা যায়, তাহলে গুড়িতে শিকড় গজাতে শুরু করে । শিকড় সহ চারা গাছ লাগালেই গাছ বড় হতে শুরু করে । এই গাছ বড় হলে ডালগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে চার দিকে ঝুলিয়ে দিলেই গাছে প্রচুর ফল ধরে । চার দিকে যত বেশী ঝুলিয়ে রাখা যায়, তত বেশী ফল ধরে । 

                                                               এই গাছের গোড়ায় ২০ থেকে ২৫ কেজি গোবর সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম এমপি সার ও ৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হয় । পিঁপড়ার উৎপাত ছাড়া তেমন কোন রোগ-বালাই নেই বললেই চলে । এ জন্য মাঝে-মধ্যে পিঁপড়া নাশক পাউডার ছিটাতে হয় । আগাছা হলে পরিস্কার করতে হয় । তাহলেই এর ফলন ভালো ফলন পাওয়া যায় । 

Wednesday, March 7, 2018

ক্লাস পার্টি-২০১৭, আলোড়ন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ

ক্লাস পার্টি-২০১৭
আলোড়ন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ
হয়েগেল ক্লাশ পার্টি । সবাই খুশিতে আটখানা । আগের দিন তিলতিল করে ক্লাস রুমগুলো সাজানো হলো । মেইন গেট থেকে শুরু করে ছয়তলার হল রুম পর্যন্ত । সকাল থেকে আনন্দের এক নতুন আমেজ বিরাজ করছে । ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অভিভাবকবৃন্দ সবাই নতুন ও রঙ্গীন পোষাক পরিধান করে ঘূরা ফেরা করছে । এক বিশাল আনন্দ যে অপেক্ষা করছে এটা স্পষ্টতই বোঝাযাচ্ছে । সেলফি তোলার ক্লিক ক্লিক শব্দে আর আলোর ঝলমলানো যেন আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে । ছোটরা এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে । শিক্ষকগণ অপেক্ষায় আছেন, কখন কেক এসে পৌঁছবে । ২৬ পাউন্ড কেক অর্ডার করা হয়েছে । এত বড় কেক আসবে, কিভাবে ছয় তলা পর্যন্ত উঠানো যায় তা নিয়ে সবাই ভাবনার যেন অন্ত নেই ।

শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে একটা উপায় বের করলো । সেভাবেই কেক উপরে উঠানো হলো । তার পূর্বে প্রতিটি ক্লাসেই একটি করে ছোট কেক কাটা হয় । সেই ছোট কেক কাটার সময় প্রতিটি ক্লাসেই একটি করে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল । শিক্ষিকাগণ অত্যান্ত পরিশ্রম করে ক্লাস রুম সাজিয়ে ছিল । ছোট ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মাথার তাজ বানিয়েছিল রঙ্গিন আর্ট পেপার কেটে । সেই তাজে নিজের হাতে ডিজাইন করেছিলেন । তাজ গুলো মাথায় পড়ানোর পর মনে হচ্ছিল ফুল পরীর আসর জমেছে । সবাই ছোটদের দেখে মুগ্ধ হয়েছিল । ইতিমধ্যে ২৬ পাউন্ড কেক এসে পৌঁছে গেছে । সবাই ধরাধরি করে কেক ৬ তলা হলরুমে নিয়ে রেখেছেন । ছাত্র-ছাত্রীরা এতবড় কেক দেখে ভিষণ ভাবে আনন্দিত । কেকের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ছবি তোলায় ব্যাস্ত । আবার কেউ পাশে দাঁড়িয়ে প্রাণ ভরে দেখার চেষ্টা করছে । 
মাইক থেকে ঘোষণা দেয়া হলো কিছুক্ষণের মধ্যেই কেক কাটার পর্বশুরু হবে । ইতিমধ্যেই ভাইস-চেয়ারম্যান, প্রিন্সিপাল, ভাইস-প্রিন্সিপাল, এডমিনিষ্ট্রেটরসহ সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষকগণ মঞ্চে আসায় একের পর এক বিশেষ বক্তব্যের পর্ব শেষ করা হয় । এবার কেক কাটার পালা । কেক কাটা শুরুর সাথে সাথেই সবাই আনন্দের চিৎকার । চার দিকে ফোম স্প্রে আর জড়ি ছিটানোর মধ্যে দিয়ে এক মহা আনন্দ শুরু হয়ে গেলো । শেষে সবাই কেক ও বিরিয়ানী খেয়ে আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরে গেলো । এভাবেই অনুষ্ঠানটি শেষ হয়েছিল ।

Monday, March 5, 2018

ব্রাহামা গরুর নতুন জাত: বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

ব্রাহামা গরুর নতুন জাত:
 বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য
বাংলাদেশের গরুর মাংশের চাহিদার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আমরা দেশের অভ্যন্তর থেকে উৎপাদন করতে পারি । বাকি চাহিদার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসে বাহির থেকে । বিশেষ করে ভারত, পাকিস্থান, নেপাল, ভূটান ও বার্মা থেকে । এ সমস্যাটি কিভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে পশু সম্পদ অধিদপ্তর দির্ঘ দিন চিন্তা ভাবনার পর একটি গবেষণা চালিয়েছেন । দির্ঘ গবেষণার পর ২০০৮ সালে ব্রাহামা যাকে বলা হচ্ছে আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । আসলে এটি ভারতীয় গরুর আদিজাত ।

                                                         ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এজাতটি আমেরিকায় নিয়েগিয়ে তার উন্নয়ন ঘটিয়ে তা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে । এজাতটিকে পৃথিবীর সেরা মাংশ উৎপাদনকারী গরুর একটিতে পরিনত করা হয়েছে । সেই জাতটিই হলো ব্রাহামা । এই জাতটিকে আরো গবেষণার মাধ্যমে আমাদের প্রকৃতির উপযোগী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে । ২০১০ সালে বাংলাদেশ পশু সম্পদ অধিদপ্তর আমেরিকা থেকে সিমেন (বীজ) সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন । তারপর সারা দেশের ৮০ টি উপজেলায় বাছাই করা গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর এদের সিমেন (বীজ) দেয়া হয় । তারপর বাছুর জন্মের পর বাছুরগুলো সংগ্রহ করা হয় গবেষণার জন্য ।

                                                                 এতে ৫০ ভাগ ষাঁড় বাছুর ও ৫০ ভাগ বকনা বাছুর পাওয়া যায় । এটিই ছিল প্রথম জেনারেশন । গরুর এই জেনারেশন থেকে যে বীজ (সিমেন) সংগ্রহ করা হবে, তা উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তার মাধ্যমে সারা দেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়া হবে । আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ । শতকরা প্রায় আশি ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে । যার অধিকাংশ মানুষই কৃষি কাজের সাথে জড়িত । ব্রাহামা জাতের গরু কৃষকের ভাগ্য বদলে দিতে পারে । প্রায় প্রতিটি গরুই এক মেট্রিক টনেরও বেশী হয়ে থাকে । দেশী ওজনে ২৭ মনেরও বেশী । এজাতের গরু এক বছর সময় ধরে লালন পালন করলে একটন (১০০০ কেজি) ওজন হলে দৈনিক গড় বৃদ্ধি ২.৭ কেজি । 

                                                                  অত্যান্ত লাভ জনক এই গরুটি কৃষকের ভাগ্য বদলে দিবে বলে আশা করা যায় । গরুর মাংশ বাংলাদেশে প্রতি কেজি পাঁচশত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে । এতে করে একটি ব্রাহামা জাতের গরু লালন-পালন করে একজন কৃষক বছরে প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন । পশু সম্পদ অধিদপ্তর ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে আরো উন্নত পরিবেশ ও আবহাওয়া উপযোগী এই গরুর জাত প্রতিটি গ্রামের কৃষকের হাতে পৌছে দিতে চান । সরকার পশু সম্পদ সম্প্রসারনের লক্ষ্যে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করেছেন । ইতিমধ্যে প্রথম জেনারেশন ব্রাহামা গরু থেকে সিমেন (বীজ) প্রকৃয়াজাত শুরু করেছেন ।সরকার আশাকরেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে ব্রাহামা গরুর জাত পৌছ দিতে পারবে । এই গরু আমাদের দেশীয় গরুর মতো, সাধারণ মানের সকল ধরণের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে । সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ মনে করেন আগামীতে এই জাত কৃষকের ভাগ্য বদলে দিবে ।