Monday, March 5, 2018

ব্রাহামা গরুর নতুন জাত: বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

ব্রাহামা গরুর নতুন জাত:
 বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য
বাংলাদেশের গরুর মাংশের চাহিদার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আমরা দেশের অভ্যন্তর থেকে উৎপাদন করতে পারি । বাকি চাহিদার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসে বাহির থেকে । বিশেষ করে ভারত, পাকিস্থান, নেপাল, ভূটান ও বার্মা থেকে । এ সমস্যাটি কিভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে পশু সম্পদ অধিদপ্তর দির্ঘ দিন চিন্তা ভাবনার পর একটি গবেষণা চালিয়েছেন । দির্ঘ গবেষণার পর ২০০৮ সালে ব্রাহামা যাকে বলা হচ্ছে আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । আসলে এটি ভারতীয় গরুর আদিজাত ।

                                                         ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এজাতটি আমেরিকায় নিয়েগিয়ে তার উন্নয়ন ঘটিয়ে তা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে । এজাতটিকে পৃথিবীর সেরা মাংশ উৎপাদনকারী গরুর একটিতে পরিনত করা হয়েছে । সেই জাতটিই হলো ব্রাহামা । এই জাতটিকে আরো গবেষণার মাধ্যমে আমাদের প্রকৃতির উপযোগী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে । ২০১০ সালে বাংলাদেশ পশু সম্পদ অধিদপ্তর আমেরিকা থেকে সিমেন (বীজ) সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন । তারপর সারা দেশের ৮০ টি উপজেলায় বাছাই করা গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর এদের সিমেন (বীজ) দেয়া হয় । তারপর বাছুর জন্মের পর বাছুরগুলো সংগ্রহ করা হয় গবেষণার জন্য ।

                                                                 এতে ৫০ ভাগ ষাঁড় বাছুর ও ৫০ ভাগ বকনা বাছুর পাওয়া যায় । এটিই ছিল প্রথম জেনারেশন । গরুর এই জেনারেশন থেকে যে বীজ (সিমেন) সংগ্রহ করা হবে, তা উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তার মাধ্যমে সারা দেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়া হবে । আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ । শতকরা প্রায় আশি ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে । যার অধিকাংশ মানুষই কৃষি কাজের সাথে জড়িত । ব্রাহামা জাতের গরু কৃষকের ভাগ্য বদলে দিতে পারে । প্রায় প্রতিটি গরুই এক মেট্রিক টনেরও বেশী হয়ে থাকে । দেশী ওজনে ২৭ মনেরও বেশী । এজাতের গরু এক বছর সময় ধরে লালন পালন করলে একটন (১০০০ কেজি) ওজন হলে দৈনিক গড় বৃদ্ধি ২.৭ কেজি । 

                                                                  অত্যান্ত লাভ জনক এই গরুটি কৃষকের ভাগ্য বদলে দিবে বলে আশা করা যায় । গরুর মাংশ বাংলাদেশে প্রতি কেজি পাঁচশত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে । এতে করে একটি ব্রাহামা জাতের গরু লালন-পালন করে একজন কৃষক বছরে প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন । পশু সম্পদ অধিদপ্তর ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে আরো উন্নত পরিবেশ ও আবহাওয়া উপযোগী এই গরুর জাত প্রতিটি গ্রামের কৃষকের হাতে পৌছে দিতে চান । সরকার পশু সম্পদ সম্প্রসারনের লক্ষ্যে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করেছেন । ইতিমধ্যে প্রথম জেনারেশন ব্রাহামা গরু থেকে সিমেন (বীজ) প্রকৃয়াজাত শুরু করেছেন ।সরকার আশাকরেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে প্রতিটি গ্রামে ব্রাহামা গরুর জাত পৌছ দিতে পারবে । এই গরু আমাদের দেশীয় গরুর মতো, সাধারণ মানের সকল ধরণের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে । সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ মনে করেন আগামীতে এই জাত কৃষকের ভাগ্য বদলে দিবে ।

No comments: