Saturday, March 17, 2018

কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন ভ্রমন

কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন ভ্রমন

আমরা রেডি হয়ে বসে আছি । বাস কখন আসবে তার অপেক্ষায় সবাই । ছয়টা প্রায় বাজতে চলছে । চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে কক্সবাজারে হোটেল জামানের রিসিপসনে আমরা বসে আছি । আগের দিনই আমরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্যাকেজ বুকিং দিয়ে এসেছি । এখুনি টুরিস্ট বাস আমাদের নিতে আসবে । সবার মাঝেই এটা ঘুম ঘুম ভাব রয়েছে, তবুও আনন্দ যেন সবার ঘুমকে ম্লান করে দিয়েছিল । আমাদের পরিবারে ছিলাম তিন জন । আমি, আমার ছেলে তূর্য ও স্ত্রী অন্তরা । ইতিপূর্বে কোন দিন আমি সেন্টমার্টিন যাইনি । তাই নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াবো, বিষয়টা স্বপ্নের মতো লাগছিল । কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটা ট্রাভেল বাসের হর্ণ বাজার শব্দ শুনতে পেলাম । কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস সুপারভাইজার জামান হোটেলের রিসিপসনে এসে আমাদের নেয়ার জন্য খোঁজ করলো । আমরা তার সাথে এসে বাসে বসলাম । সবার চোখেই ঘুমছিল, তবুও মনে যে সবার আনন্দের হাসি ছিল তা স্পষ্টই বুঝতে পারছিলাম । বাসটি আমাদের নিয়ে ছেড়েদিল ।                

আমরা অাঁকাবাকা রোড দিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম । দুই পাশে বন আর পাহাড় । আমরা বসে ছিলাম বাসের সবার সামনের সীটে ড্রাইভারের বাম পাশে । তাই সহজেই সব কিছুই ভিডিও করতে এবং ছবি তুলতে পারছিলাম । আমি কখনো কখনো ভিডিও এবং ছবি তুলছিলাম আর প্রকৃতির এই সৌন্দর্য মনোমোগ্ধ হয়ে দেখছিলাম । কিছুদুর যাওয়ার পর দেখলাম, মাইলের পর মাইল বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রেখেছে । প্রতিটি জমির পাশে পলিথিন পেপার বিছিয়ে কি যেন শুকাচ্ছে । ড্রাইভার আমাকে বলল, “এগুলো লবনের ক্ষেত । এখান থেকে সারা দেশে লবন পাঠানো হয়”। আমাদের বাসটি অাঁকাবাকা পথ ধরে দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে সামনে এগিয়ে চললো । পথে কয়েকটি বর্ডার গার্ডের চেকপোস্টের চৌকি পেরিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম টেকনাফে ।

তখন সকাল নয়টা । আমরা বাস থেকে টেকনাফ নেমে নাস্তা করলাম । কিছুক্ষনের মধ্যেই টিকিট নিয়ে আমাদের গাইড উপস্থিত হলো । আমরা গাইডের সাথে সাথে লঞ্চ এর দিকে এগুলাম ।একশত গজ যাবার পর লক্ষ্য করলাম একটা লম্বা কাঠের ব্রিজ । এই ব্রিজ গিয়ে মিশেছে নাফ নদীতে ভিড়িয়ে রাখা লঞ্চ পর্যন্ত । ওখানে একটি বড় লঞ্চ দেখতে পেলাম। শুনেছি এই লঞ্চটি আজই বরিশাল থেকে আনা হয়েছে । আমরাই নাকি এই প্রখম যাত্রি । শুনে খুবই ভালো লাগলো । আমরা যথারীতি লম্বা কাঠের ব্রিজ পেরিয়ে লঞ্চে উঠে এলাম । যাত্রি কম থাকায় আমরা সুবিধা জনক সুন্দর একটি যায়গা দেখে চেয়ারে বসে পড়লাম । আমি লঞ্চের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গাঙচিল উড়ার দৃশ্য দেখে ছবি তুললাম এবং ভিডিও করলাম । লঞ্চ চলতে থাকলো । বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা নাফ নদীর ওপারের বার্মার গ্রামগুলো ও জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে থাকলাম । মাঝে মধ্যে নদীর পানির বড় বড় ঢেউ আর গাঙচিল উড়ার দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা সেন্টমার্টিন পৌঁছে গেলাম । 

আমরা লঞ্চ থেকে নামার পর সেখানকার লোকাল গাইড আমাদের সাথে দেখা করলো । আমরা সবাই লঞ্চ থেকে নেমে গাইডের সাথে সাথে হাঁটতে থাকলাম । আমাদের প্রথমে নেয়া হলো সেন্টমার্টিনের ছোট একটি বাজারে । সেখানে আমাদের জন্য নির্ধারিত একটি রেষ্টুরেন্টে দুপুরে লাঞ্চ করলাম । তারপর মাত্র দুই ঘন্টা সময় পেলাম । আমরা ভ্যান গাড়ির মতো তৈরি করা একটি রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বাড়িতে । 

সামনেই সীবিচ এর বড় অংশ যেখানে বড় বড় পাথরের মতো প্রবাল রয়েছে । আমরা এসে প্রবালের উপর দাঁড়ালাম । চার দিকে বাতাস বইছে । ছোট ছোট ঢেউগুলো ঝাপটা মেরে আমার পা দুটি ভিজিয়ে দিচ্ছে । মাঝে মাঝে বড় ঢেউ এসে সমুদ্র পাড়ে আছড়ে পড়ছে । আমরা সমুদ্র পাড়ে রাখা চেয়ারে বসে ডাব খেলাম ও কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম । কিছুক্ষণ পর পুনরায় প্রবালের উপর এসে দাঁড়ালাম । প্রবালের পাশ দিয়ে ছোট ছোট মাছ ও কাঁকড়ার ঘুরাঘুরি দেখতে পেলাম । সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাসের শো শো শব্দ আর ঢেউয়ের গর্জন শুনতে শুনতে আমাদের সময় শেষ হয়ে এলো । 


                                          আমি একটি ছোট্ট শিশুকে বসে থাকতে দেখলাম । আমি ওর কাছে গেলাম । ওর কাছে কিছু ঝিনুক ও কয়েকটি প্রবাল দেখতে পেলাম । আমি ওগুলো সংগ্রহ করে লঞ্চে ফিরে এলাম । প্রকৃতি যে এতো সুন্দর হতে পারে, তা যদি স্ব-চক্ষে কেউ না দেখে তাহলে  অনুমান করতে পারবে না । আমাদের লঞ্চ টেকনাফের  উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করলো । আমি লঞ্চে বসে ভাবতে লাগলাম । সেন্টমার্টিন এর প্রকৃতি এতো সুন্দর হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না । সেন্টমার্টিন এর সুন্দর প্রকৃতি, বাতাস আর ঢেউয়ের কথা মনে করতে করতে কখন যে টেকনাফ এসে পৌঁছে গেলাম, বুঝতেই পালাম না ।         

     

No comments: