Friday, June 12, 2020

সেন্টমার্টিন ও ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমন, কিভাবে যাবেন ও কত খরচ হবে

সেন্টমার্টিন ও ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমন, কিভাবে যাবেন ও কত খরচ হবে


সেন্টমার্টিন জাহাজ ঘাট

আমাদের দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন এখানে রয়েছে বিশাল বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্য এখানে গেলে যে কোনো মানুষেরই মন ভালো হয়ে যায় সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ বড় বড় প্রবাল দেখলে ভাঙ্গা মনও জোড়া লেগে যায় একদিকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল বাগান ও অন্যদিকে বড় বড় প্রবালের উপর সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ । এ যেন প্রকৃতির এক বিরামহীন খেলা । এই প্রবালদ্বীপ দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায় বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনে আমরা এই সেন্টমার্টিন নিয়ে আজকের প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানাবো, কোথায় যাবেন, কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন, তার প্রাইজ কেমন হোটেলে থাকলে তার ভাড়া কত, আপনার আসা যাওয়া সমস্ত খরচ ইত্যাদি । প্রতিবেদনে তুলে ধরব, বিস্তারিত সবকিছুই । আশাকরি, পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে উপকৃত হতে পারবেন  

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত, একটি প্রবাল দ্বীপ । এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমারের উপকূল হতে কিলোমিটার পশ্চিমে, নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত এই প্রবালদ্বীপে যেতে হলে, টেকনাফ থেকে জাহাজ, ট্রলার বা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত,  এই পাঁচ মাস সাধারণত সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় দুই রাতের ট্যুর প্ল্যান করবেন, কারণ প্রথম দিন যেতে যেতেই দুপুর হয়ে যাবে তড়িঘড়ি করে বিকালটা ঘুরে, পরদিন আবার ফেরত আসতে নিশ্চয়ই আপনার মন চাইবে না দুই রাত প্ল্যান করে আসলে আপনাদের জন্য ভ্রমণটা ফলপ্রসূ হবে, ভালো লাগবে ধীরে সুস্থে পুরোটা সময় ঘুরে বেড়িয়ে যেতে পারবেন, এই প্রবাল দ্বীপ থেকে এই প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য এতটাই মনমুগ্ধকর, আপনি ওখানে গেলে ফিরে আসতে চাইবেন না একা বা বন্ধুদের সাথে নিয়ে গেলে, সম্ভব হলে হাতে একটু সময় নিয়ে যাবেন পরিবারের সাথে গেলে অন্তত ২ থেকে ৩ দিন হাতে নিয়ে যাবেন তাই আস্তে ধীরে সবাইকে নিয়ে পুরো প্রবালদ্বীপ, ঘুরে বেড়িয়ে আসতে পারবেন  

 


সেন্টমার্টিন জাহাজ ঘাট থেকে মানুষ হোটেলে যাচ্ছে

কিভাবে যাবেন সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপে ঢাকা থেকে শ্যামলী, হানিফ, সেন্টমার্টিন পরিবহন সহ বেশ কয়েকটি বাস চলে ওই রোডে নিজের পছন্দমত বাস নির্বাচন করে, এক সপ্তাহ বা দশ দিন আগেই টিকিট কেটে রাখুন কারণ এই সময়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সাতটায় গাড়ির টিকেট সংগ্রহ করুন কারণ পরদিন সকাল টায় সেন্টমার্টিন যাওয়ার জাহাজ ধরতে হবে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে সাগরের ঢেউয়ের দৃশ্য আপনি দেখতে পাবেন পাশাপাশি অনেক পাখি উড়বে, যা দেখে আপনার মনে থাকবে সারা জীবন এই ধরনের নৈসর্গিক দৃশ্য আপনি সহজে কোথাও পাবেন না, যা সেন্টমার্টিনে রয়েছে আপনার ওঠা জাহাজটি যখন নাফ নদী পার হয়ে বঙ্গোপসাগরে ঢুকবে বড় বড় ঢেউ যখন জাহাজটি দুলতে শুরু করবে, তখন আপনার মনে হবে, এই বুঝি জাহাজটি ডুবে যাবে আপনি একটুও ভয় পাবেন না কারণ এই ঢেউয়ের ভিতরেই জাহাজটি প্রতিনিয়ত চলে মানুষ পারাপার করে, কখনোই ডুবে না জাহাজের কারিগরি কৌশল গুলো বড় বড় ঢেউয়ে চলার উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে

সেন্টমার্টিনে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায় প্রতি ঘন্টা সাইকেল ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে তিন ঘণ্টায় আপনি পুরো সেন্টমাটিন দ্বীপ সাইকেল দিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোনো কোনো নির্জন জায়গা আছে, যেখানে মানুষ যাতায়াত করেন না তবে কয়েকজন বন্ধু মিলে সাইকেল নিয়ে, সব জায়গায় নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পারবেন সেন্টমার্টিনের হোটেলগুলোতে আপনি পছন্দ করে মাছ ফ্রাই করে খেতে পারবেন তবে মসলা মাখানো কাটা মাছগুলো খাবেন না মসলা মাখানো অধিকাংশ মাছগুলি পঁচা বা বাসি হয়ে থাকে নিজে পছন্দ করে মাছ কিনে দিবেন তারা মাছ কেটে সুন্দুর করে ফ্রাই করে দিবে এতে আপনি ঠকবেন না, বরং ভালো মাছ আপনি পছন্দ করে খেতে পারবেন  

 

                                       সেন্টমার্টিন জাহাজ ঘাটে সমুদ্র ভ্রমনের জন্য স্পিটবোট

সেন্টমার্টিন আসলে অবশ্যই একবার ছেঁড়াদ্বীপ যাবেন সেন্টমার্টিন রাত থেকে, পরদিন সকালে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন তাই সকালে ফ্রেস হয়ে, নাস্তা সেরেই, চলে আসুন ট্রলার ঘাটে এখানে আপনি ছেঁড়াদ্বীপ যাওয়ার জন্য অনেক গুলো ট্রলার পাবেন যদি কোনো কারণে ট্রলার না পান, তাহলে স্পিডবোটে করে যেতে পারবেন তবে স্পিড বোটের ভাড়া কিছুটা বেশি পড়বে ট্রলারে ছেড়া দ্বীপ আসা এবং যাওয়ার জন্য নেবে জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে আর স্পিড বোটে গেলে, আসা-যাওয়ার জন্য জনপ্রতি নেবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে তবে ট্রলারের চাইতে স্পিডবোটে যাওয়া-আসার সময়টা কিছু কম লাগে এতে আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় বেঁচে যাবে ছেড়া দ্বীপ অনেক সুন্দর একটি জায়গা   এখানে গেলে আপনার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হবে পুরো দ্বীপ নির্দিষ্ট দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াবেন নিরাপদে তবে মনে রাখবেন, কেটস বা ভালো জুতা ছাড়া, এই দ্বীপে ঘোরাফেরা খুব বিপদজনক হতে পারে । কারণ শামুক-ঝিনুকে আপনার পা কেটে যেতে পারে এছাড়াও অনেক পাথরগুলোর ধারালো শামুকের মতো মুখ রয়েছে যেখানে পা রাখলে, আপনার পা ছিলে যেতে পারে

কিভাবে হলো এর নামকরণ, তা আমরা এখন জানবো । ছেঁড়া দ্বীপ হলো, বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে আর কোন ভূখণ্ড নেই সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে যে গুলোকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয়ে থাকে, “ছেঁড়াদিয়া় বা সিরাদিয়া”  ছেঁড়া শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন, এই দ্বীপ সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন । সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন থেকে ছেঁড়া দ্বীপ প্রায় কিলোমিটার দক্ষিণ অবস্থিত দক্ষিণের এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রয়েছে, প্রচুর প্রাকৃতিক পাথর দ্বীপের প্রায় অর্ধেক, এই জোয়ারের সময় সমুদ্রের নিচে ডুবে যায় এই এলাকাটি সরকারের ঘোষিত, একটি পরিবেশ-প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ছেঁড়া দ্বীপ এলাকায় ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানায় জমি বেচা-কেনা আইনত নিষেধ । এমনকি কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ  

 

                               সেন্টমার্টিনে ৪০/৫০ টাকা ঘন্টায় সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়                            

ভ্রমণ শেষে সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার ভিতরে চলে আসুন ছেঁড়াদ্বীপ ছেড়ে সেন্টমার্টিন ফিরে হোটেলে কিছুক্ষণ রেস্ট নিন তারপর দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে, দুপুর দুইটা থেকে আড়াইটার ভিতরে চলে আসুন, জাহাজঘাটের আপনার নির্ধারিত জাহাজটিতে যদিও তিনটার সময় জাহাজ ছেড়ে দেয় সেন্টমার্টিন থেকে তবে পরিবারের সদস্য থাকলে, একটু আগে আসাই ভালো কারণ এই সময়টায় প্রচুর ভিড় পোহাতে হয়  ঠিক ৩টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছেড়ে দিবে । জাহাজ চলতে চলতে বঙ্গোপসাগর পার হয়ে, পুনরায় নাফ নদীতে এসে পড়বে এই নাফনদী ধরে সামনে এগোতে এগোতে চলে আসবে টেকনাফে  

 আপনি টেকনাফ আসার পর, পূর্বে নির্ধারিত বাস অথবা নতুন যে কোন বাসে ফিরে আসুন, ঢাকায় বা অন্য কোন গন্তব্যে বা বাড়িতে এই দুইদিনের যাত্রা আপনার জীবনের অনেক অভিজ্ঞতার জন্ম দিবে এবং ভালোলাগার জন্ম দিবে বুঝতে পারবেন, আমাদের দেশে কত সুন্দর সুন্দর স্থান রয়েছে, যা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না নিচে আপনাদের সুবিধার জন্য সেন্টমার্টিনের বাস, জাহাজ হোটেলের ফোন নাম্বার দেয়া হলো পাশাপাশি আপনার দুইদিন এক রাত্র হোটেলে থাকা সহ, কত খরচ হতে পারে, তারও একটি ধারণা দেওয়া হলো আশাকরি, সেন্টমার্টিন ভ্রমণের এই গাইড, আপনি আপনার পরিবারের অনেক কাজে লাগবে  

এক জনের সেন্টমার্টিন ও ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমন খরচ:

১. বাস ভাড়া (ঢাকা টু সেন্টমার্টিন)- ৯০০×২=১৮০০ টাকা (যাওয়া ও আসা) ।

২. টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজে ভাড়া-২৫০×২=৫০০ টাকা (সাধারণ সীটে, যাওয়া ও আসা) ।

৩. সেন্টমার্টিনে হোটেল ভাড়া- ১০০০ টাকা । ( ১ রাত )

৪. ছেঁড়া দ্বীপের ট্রলার ভাড়া- ১৫০×২=৩০০ টাকা ( যাওয়া ও আসা ) ।

৫. সেন্টমার্টিনে হোটেলে খাওয়া- ২০০×৩=৬০০ টাকা ( ১ম দিন দুপুর ও রাতে, পর দিন দুপুরে ) ।

৬. কুমিল্লায় দুই বেলা খাবার- ৩০০×২=৬০০ টাকা ( বাসে যাওয়ার দিন রাতে ও আসার দিন দুপুরে )

৭. সকালের নাস্তা (২দিন)- ৫০×২=১০০ টাকা ( টেকনাফ পৌঁছার পর ও আসার দিন সকালে ) ।

৮. ভ্যান ভাড়া- ১০০×২=২০০ টাকা ( জাহাজ ঘাট থেকে হোটেলে যাওয়া ও আসা )

***** সর্ব মোট খরচ= ৫১০০ টাকা ( ব্যক্তিগত হাতখরচ বাদে )

সেন্টমার্টিনে যে সকল হোটেলে রাত্রি যাপন করবেন, তাদের ফোন নাম্বার:

১. সমুদ্র বিলাস ( হুমায়ুন আহমদের ) : ০১৮১৩০১৯৮৩৯

২. হোটেল সপ্ন প্রবাল : ০১৮১৪২৭৪৪০৯, ০১৭২২৫৪৫৮৭২ ( সেন্টমার্টিন ),

                                  ০২৮৬১১৪২৮, ০১৭১১১১০৯১৯ ( ঢাকা )

৩. কোরাল ভিউ রিসোর্ট : ০১৯৮০০০৪৭৭৭